এবার পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে উদ্ভাবিত হলো পাটের পলিমার ব্যাগ বা সোনালী ব্যাগ যা পলিথিনের চেয়েও পাতলা, শক্ত এবং সুদৃশ্য । পরিবেশ বান্ধব এই ব্যাগ উদ্ভাবনে দেশ আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল। বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ড. মোবারক আহমদ খান পাটের সেলুলোজ থেকে পঁচনশীল পলিমার ব্যাগ উদ্ভাবন করে দেশে বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন। দেখতে পলিথিনের মতো কিন্তু পলিথিনতো নয়ই, তৈরি নয় কোন প্লাষ্টিক উপকরণ দিয়েও। ড. মোবারক উদ্ভাবিত পলিমার ব্যাগ আমদানি করা পণ্যের ৫ ভাগের এক ভাগ দামে কেনা যাবে। নাম রাখা হয়েছে সোনালী ব্যাগ (পলিমার ব্যাগ)। এই ব্যাগ সম সাইজের পলিথিন ব্যাগের চেয়ে দেড়গুণ ভার বহন করতে পারবে। পানিতে ৫ ঘন্টা স্বমহিমায় থাকার পর ধীরে ধীরে গলে যেতে যেতে ৫-৬ মাসের মধ্যে মাটিতে মিশে যাবে এই সোনালী ব্যাগ।
ডেমরার লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে পরীক্ষামূলক ভাবে তৈরি হচ্ছে পাটের পলিমার ব্যাগ। দেশে এবং বিদেশের বহু ক্রেতা এই ব্যাগ উৎপাদনে আর্থিক সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিচ্ছে। চাহিদা পত্রও আসছে বেশ।
একদিকে সোনালী আঁশ, অন্যদিকে রূপালী কাঠি- দু’য়ে মিলে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে পাট। পাট কাঠি থেকে উচ্চমূল্যের অ্যাকটিভেটেড চারকোল উৎপাদন ক’রে বিদেশে রপ্তানী করা হচ্ছে, যা থেকে তৈরি হচ্ছে কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ারের কালি, আতশবাজি, ফেসওয়াশের উপকরণ, ওয়াটার পিউরিফিকেশন প্লান্ট, মোবাইল ফোনের ব্যাটারী ও বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী পণ্য । প্রতি বছর দেশে উৎপাদিত প্রায় ৩০ লাখ টন পাট কাঠির অর্ধেকও যদি সঠিকভাবে চারেকোল উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় তাহলে তা থেকে প্রায় ২ হাজার ৫শ’ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এছাড়া পাট কাটিংস ও নি¤œমানের পাটের সঙ্গেঁ নির্দিষ্ট অনুপাতে নারিকেলের ছোবড়ার সংমিশ্রনে প্রস্তুত করা হয় পরিবেশ বান্ধব এবং ব্যয়সাশ্রয়ী জুট জিওটেক্সটাইল, যা ভূমিক্ষয় রোধ, রাস্তা ও বেড়িবাঁধ নির্মান, নদীর পাড় রক্ষা ও পাহাড় ধস রোধে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলায় বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের প্যাভিলিয়নে পাটের তৈরি বিশেষ ব্যাগ অর্থাৎ নয়া উদ্ভাবিত সোনালী ব্যাগ (পলিমার ব্যাগ), জিন্স (ডেনিম), পাট খড়ি থেকে উৎপাদিত ছাপাখানার বিশেষ কালি ( চারকোল), পাট ও তুলার মিশ্রনে বিশেষ সুতা (ভেসিকল) মেলায় আগত দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছে।
পাট দিয়ে শাড়ী, লুঙ্গী, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবী, ফতুয়া, বাহারি ব্যাগ, খেলনা, শো-পিস, জুতা-স্যান্ডেল, শিকা, দড়ি, সুতলি, দরজা-জানালার পর্দার কাপড়, গহনা ও গহনার বাক্সসহ ২শ’ ৮৫ ধরনের পণ্য দেশে ও বিদেশে বাজারজাত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধি ও পুষ্টি সাধনে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার, রপ্তানী আমাদের সুদিনের হাতছানি দিচ্ছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস